রেজিস্টরের গায়ের ডোরাকাটা দাগ গুলো কি


বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক্স জগতের একটি বহুল ব্যাবহৃত কম্পোনেন্ট হল রেজিস্টর। যে কোন ইলেক্ট্রিক সার্কিট বোর্ডের গায়েই লক্ষ্য করলে এদের দেখা পাওয়া যাবে। রেজিস্টরের মূল কাজ হল বিদ্যুৎ প্রবাহে বাঁধা দেয়া।

রেজিস্টর মূলত দুই ধরণের হয়। ফিক্সড রেজিস্টর এবং ভেরিয়েবল রেজিস্টর। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে প্রথম ধরণের রেজিস্টর গুলোর বাঁধা দেয়ার মান নির্দৃষ্ট করে দেয়া কিন্তু পরের ধরণের রেজিস্টরের মান ইচ্ছা মত পরিবর্তন করা যায়।

দুই ধরণের রেজিস্টরই অনেক রকম আকারে পাওয়া যায়। এবং একটা থেকে আরেকটা দেখতেও আলাদা। কিন্তু ডোরা কাটা দাগ শুধু মাত্র ফিক্সড রেজিস্টরেই পাওয়া যায়। তাই আমাদের এখনকার আলোচনা ফিক্সড রেজিস্টর নিয়েই। নিচে কিছু ফিক্সড রেজিস্টরের ছবি দেয়া হল।


বড় আকারের রেজিস্টরের গায়ে এর মান লিখে দেবার মত জায়গা থাকলেও ছোট আকারের রেজিস্টারে সেই সুবিধা নেই বা লিখলেও সেটা পড়া কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই ছোট আকারের ফিক্সড রেজিস্টরের মান এর গায়ে কালার কোডেড করে দেয়া থাকে যাতে করে পড়তে সুবিধা হয়।

রেজিস্টরের কালার কোডের কয়েক রকম পদ্ধতি থাকলেও আন্তর্জাতিক ভাবে চার রং এর কালার কোডই সবচেয়ে বেশি ব্যাবহার হয়। এই ফোর ব্যান্ড কালার কোডে চারটি রং এর গোল গোল দাগ দিয়ে রেজিস্টরের মান বোঝানো হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক রং এবং এদের অবস্থানের আলাদা আলাদা মানে আছে।

কালার কোডেড রেজিস্টর থেকে এর মান পড়তে গেলে অবশ্যই আমাদের আগে থেকে কালার গুলোর মান জানতে হবে। নিচে বিভিন্ন কালার এবং এদের সাথে সংশ্লিষ্ট মানের একটা চার্ট দেয়া হল।


চার্ট থেকে দেখে বোঝা যাচ্ছে যে মোট ৯ টি কালার ব্যাবহার করে এই পদ্ধতিতে রেজিস্টরের মান লেখা হয় এবং আরো বোঝা যাচ্ছে যে এই চার্ট মনে রাখাও কষ্টকর। প্রথম ৭ টি কালার সরাসরি রেজিস্টরের মান লিখতে ব্যাবহার করা হয়। আর পরের দুটা এর কোয়ালিটি বুঝাতে ব্যাবহার করা হয়।

রেজিস্টরের কালার ব্যান্ডের এই মান মুখস্থ রাখার জন্য আমরা একটা বাক্য মনে রাখতে পারি। সেটা হল "কাবালা কহ সনীবে ধূসা"। প্রত্যেক রং এর প্রথম অক্ষর গুলো পর পর সাজিয়ে এই মন্ত্রটা তৈরি করা হয়েছে। যেমন ০ এর জন্য কালোর কা, ১ এর জন্য বাদামীর বা, ২ এর জন্য লালের লা এভাবে।

এখন যেকোন রং দেখলে তার সাথে সংযুক্ত মান অনায়াসেই বলে দিতে পারব। কিন্তু রেজিস্টরের মান এখনো পড়তে শিখিনি। তার জন্য লাগবে আরেকটা বিষয় জানা। আমরা যেমন বাংলা বা ইংরেজী বাম থেকে ডানে পড়ি আবার আরবী পড়ি উল্টো দিক থেকে ঠিক সেভাবে রেজিস্টরকেও বাম থেকে পড়তে হয়।

রেজিস্টর হাতে নিয়ে প্রথমেই দেখতে হবে এর কোন পাশে সোনালী বা রুপালী দাগ দেয়া আছে। যে পাশে এই দুই রঙের যেকোন একটা রং পাওয়া যাবে সেই পাশটা ডান দিকে রেখে পড়তে হবে। আর অবশ্যই বাম থেকে ডানে পড়তে হবে।

বাম থেকে প্রথম দুই কালারের মান পর পর বসিয়ে যে সংখ্যা আসবে তার সাথে তৃতীয় রং এর মান সংখ্যক শূন্য বসালে রেজিস্টরের মান পাওয়া যাবে। আর চতুর্থ কালার টা এর টলারেন্স বলে।


যেমন ওপরের রেজিস্টরের ক্ষেত্রে সোনালী রং ডানে রেখে যদি পড়ি, প্রথম দুই রং হলুদ এবং বেগুনীর জন্য আমরা পাব ৪ এবং ৭ অর্থাৎ ৪৭। তৃতীয় রঙ বাদামীর জন্য পাব একটা শূন্য। অর্থাৎ ৪৭০। এটাই হল এই রেজিস্টরের মান। ৪৭০ ওহমস।


আবার এই রেজিস্টরের জন্য হলুদ বেগুনীর পরে কমলার জন্য পাচ্ছি ৩ টা শূন্য। তাই এর মান ৪৭০০০ অর্থাৎ ৪৭কে ওহমস।

এখন আসি টলারেন্স বা রেজিস্টরের কোয়ালিটির ব্যাপারে। আমরা জনি কোন পদার্থ যখন বিদ্যুৎ প্রবাহে বাঁধা দেয় তখন সেটা ধীরে ধীরে গরম হতে থাকে। রেজিস্টর ও যেহেতু বিদ্যুৎ প্রবাহে বাঁধা দেয় তাই রেজিস্টর ও গরম হয়। এমনকি ভূল ভাল ভাবে রেজিস্টর বসালে সেটা গরম হয়ে লাল রং ধারন করে।

রেজিস্টর বিদ্যুৎ প্রবাহে যত বেশি বাঁধা দেবে তত বেশি গরম হবে। রেজিস্টরের ভেতরের গঠন দেখলেই ব্যপারটা বোঝা যাবে।


খেয়াল করলে দেখব যে রেজিস্টরের ভেতরে বাল্বের ফিলামেন্টের মত প্যাঁচানো কয়েল আছে। এই কয়েলই বিদ্যুৎ প্রবাহে বাঁধা দেয়। কয়েল যত বড় হবে তত বেশি বাঁধা দেবে আর তত বেশি গরম হবে।

যে কোন পরিবাহী পদার্থের তাপ বাড়ানো হলে সেটার রোধ বা বাঁধা দেয়ার ক্ষমতা কমে যায়। এখন রেজিস্টরের তাপ যেহেতু বাড়বে তাই এর ক্ষমতাও কিছুটা কমে বাড়ে। এই ব্যাপারটাকেই বলা হচ্ছে টলারেন্স।

কি পদার্থ দিয়ে এই কয়েল তৈরী হচ্ছে সেটার ওপর ভিত্তি করে টলারেন্স কমানো বাড়ানো যায়। তাই কোন রেজিস্টরের টলারেন্সের কালার খেয়াল করলে দেখব সেখানে সাধারণত দুই রকমের কালার দেখা যায়। সোনালী এবং রুপালী। সোনালী রঙের জন্য টলারেন্স হবে ৫% এবং রুপালী রঙের জন্য টলারেন্স হবে ১০%।

যদি ৪৭০০০ ওহম রেজিস্টরটা আবার খেয়াল করি তো দেখব এর শেষ রং সোনালী। অর্থাৎ এর টলারেন্স ৫%। তাই এই রেজিস্টরের মান হবে ৪৭০০০±৫%। 

আশা করি রেজিস্টরের কালার কোডের ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তবে কমেন্টে লিখুন। অবশ্যই উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। ভালো লাগলে লাইক দিয়ে শেয়ার করবেন।
রেজিস্টরের গায়ের ডোরাকাটা দাগ গুলো কি রেজিস্টরের গায়ের ডোরাকাটা দাগ গুলো কি Reviewed by Asad Bin Abdullah on March 01, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.